মতিন সাহেবের ঝিমুনি ভাবটা এখন বেড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই এ রকম হচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠার ঘণ্টা দুয়েক পর থেকেই আবার ঘুম ধরে । তার ধারণা বয়স বাড়ার কারনে এটা হচ্ছে। অবশ্য এটা নাও হতে পারে। তার স্ত্রীকে বিষয়টা বলেছিলেন । তার স্ত্রী আশা বেগম চোখ মুখ শক্ত করে বললেন ‘ শুয়ে বসে খেলে ঘুম ধরা স্বাভাবিক , আমার মত ঘানি টান তাহলে আর ঘুম পাবে না ‘। মতিন সাহেব ঘানি টেনেছেন। দীর্ঘকাল এই সংসারের হাল তিনি নিজের হাতে রেখেছিলেন । এখন চোখে ছানি পড়েছে । কাজ করার শক্তি নাই ঘানি টানবে কিভাবে ? মুখে অবশ্য স্ত্রীকে কিছুই বললেন না । মতিন সাহেবের দুই মেয়ে । বড় মেয়ে শিলা আর তার দুই বছরের ছোট সপ্না । দুই মেয়েরই এখন বিয়ের বয়স কিন্তু সংসারের অবস্থা ভালো না । তার স্ত্রীর ব্যাংকে কিছু গচ্ছিত টাকা ছিল । সেই টাকার সুদে সংসার চলে। এই জন্য তিনি শশুরের কাছেও কৃতজ্ঞ । তিন বেলা ডাল ভাত যে কিভাবে আশা বেগম যোগান এটা ভেবেই তিনি স্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞ।ইদানিং ঘুমের সাথে আর একটা সমস্যা এসে যোগ হয়েছে সেটা হলো খিদে। খিদেটা তিনি একদম সহ্য করতে পারেন না । তার মতে বয়সকালে দুইটা জিনিস আটকানো খুব কষ্ট একটা প্রসাবের বেগ আর একটা খিদে । কিন্তু এই দুটোই তার এখন বেশী । তার সামনে এখন একবাটি মুড়ি। সাদা মুড়ি । ঘরে তেল নেই বোধহয় । সপ্তাহে দু এক দিন অবশ্য তেল মরিচ মাখা মুড়ি পাওয়া যায় । ঐ দুয়েক দিন শিলার মার মন ভাল থাকে । মন ভাল থাকার বিরাট সুবিধা । তিনি মুড়ির বাটিটা হাতে নিয়ে ডাকলেন ‘ শিলার মা ও শিলার মা শুনছো নাকি একবার’ ? ‘কি হয়েছে ? চ্যাঁচামেচি করছো কেন’ ? ‘চেঁচালাম কোথায় ? ঘরে তেল আছে নাকি’ ? ‘বাজার থেকে তো তেলের ড্রাম এনে রাখো নাই । শুধা মুড়ি খেলে খাও আর না খেলে রেখে দাওÕ? মতিন সাহেব দেখলেন আজ মনে হয় মেজাজ বেশী খারাপ । তিনি কথা না বলে তেল ছাড়া মুড়ি খাওয়ার সিধান্ত নিলেন । পরে হয়তো এটুকও পাওয়া যাবে না’ । ‘ঘটনা কি শুনছো শিলার মা’ ? ‘কোন ঘটনা’ ? ‘আজ যে বিজয় দিবস এইটা ভুলে বসে আছো ? সব রাগ না হয় আমার উপর বিজয় দিবস তো কিছু করে নাই’?
আশা বেগম অবাক হন । এই কথাটা তার মনে নাই ! অথচ তার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা । এই একটি দিনে মনে হয় তিনিই সবচেয়ে সুখী মানুষ । তার স্বামীর জন্য অহংকার হয় । তবু তিনি এমন ভাব দেখান যেন তার মনে আছে । না হলে লোকটা কষ্ট পাবে । ‘মনে আছে । জবাব দেন আশা বেগম’ । ‘এত নিরাশ ভঙ্গীতে বলছো কেন’ ? ‘তাহলে কি আনন্দে নাচতে হবে ? ঘরে একটা চাল নাই দুপুরে খাওয়া হবে কি না তার ঠিক নাই উনি আছেন বিজয় দিবস নিয়ে’। ঘরে চাল না থাকার কথা শুনে মতিন সাহেবকে তেমন চিন্তিত মনে হলো না কারণ এর আগেও বহুবার ঘরে চাল না থাকার কথা শোনা গেলেও না খেয়ে থাকতে হয়নি । তিনি নিশ্চিন্ত মনে পকেটে হাত দিয়ে একটা চিঠি বের করলেন । বিজয় দিবস উপলক্ষে সকল স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের আজ স্কুল মাঠে সংবর্ধনা দেয়া হবে । তাকেও একখান দাওয়াত পত্র দেয়া হয়েছে । তিনি সেটা পড়তে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পারেননি । সব আবছা লাগে । চোখে ছানি পড়েছে । তিনি বড় মেয়ে শিলাকে ডাকলেন। ‘মা শিলা একটু এদিকে আয়তো’। শিলা ঘরের মধ্য পড়ছিল । বাবার ডাকে একটু বিরক্ত হলো । কারণ শিলা জানে যে কিছু একটা পড়ে শোনাতে হবে । মতিন সাহেব তার বড় মেয়েকে দিয়ে এই কাজটি প্রায়ই করান । কিন্তু তার সমস্যা হলো পড়ার সময় উচ্চারণে কোন ভুল করা যাবে না । ভুল হলেই বলবে ‘ মা’রে শোন পড়ার সময় সঠিক উচ্চারন করবি। ভুল করলে শুনতে বিশ্রী লাগে । শিলা পড়া ছেড়ে বাবার কাছে এলো।
‘ কি বলবে বলো’ ‘এই চিঠিটা একটু পড়ে শোনাতো মা’ শিলা কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে একখান বিজয় দিবসের আমন্ত্রনপত্র । শিলা সেটা পড়ে তার বাবাকে শোনায় । পড়া শেষে মতিন সাহেব আবার জিজ্ঞেস করে ‘ দেখতো মা ফুলের মালা কার হাত থেকে নিতে হবে’ ? শিলা আবার দেখে বলে ‘ জব্বার চাচার কাছ থেকে ‘ ‘কোন জব্বার রে মা’ ? ‘জব্বার তো এই গ্রামে একটাই আছে বাবা । খোঁড়া জব্বার’ । মতিন সাহেব বেশ হতাশ হলেন । তিনি এটা চিন্তা করতে পারছেন না যে জব্বারের মত একটা লোকের কাছ থেকে ফুলের মালা গলায় পরতে হবে । স্বাধীনতার সময় জব্বারের যে ভূমিকা ছিল তা এই গ্রামের সব লোকই জানে । তার পরও এত বড় একটা অন্যায় সবাই কিভাবে মেনে নেয় । এই ছানি পরা চোখেও মতিন সাহেবের হিংস্র দৃষ্টি শিলার চোখে পরে । মতিন সাহেব আর ভাবতে পারেন না ।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার আগেও এই জব্বারকে বেশ সহজ সরল মনে হতো । অন্তত বাইরে থেকে তাই মনে হতো । কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর থেকে তিনি পাল্টে যেতে আরম্ভ করলেন । পোশাক- আশাকে পরিবর্তন দেখা গেলো। আগে যেখানে শার্ট প্যান্ট পরত যুদ্ধ শুরু হবার পর পাজামা পাঞ্জাবী পরা ধরলেন । দাড়িতে আতর মেখে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়াতেন । এমন ভাব করতে লাগলেন যে এই মাত্র করাচি থেকে ফিরলেন । তাই যুদ্ধে তার কিছু হবে না । মতিন সাহেবের বয়স তখন বিশ বছর । গ্রামে থাকায় প্রথম প্রথম কিছু বুঝতে পারছিলেন না । লোকজন তেমন কিছু জানতেও পারছিল না । যখন শহর থেকে লোকজন গ্রামের বাড়িতে আসতে লাগলো তখন বোঝা গেলো পরিস্থিতি খুব খারাপ । শহর থেকে এক বাড়িতে একটা রেডিও এনেছিলো একজন । প্রতিদিন পালা করে গ্রামের বড়রা সেই রেডিওতে স্বাধীন বাংলা শুনতে লাগলো । মতিন সাহেব নিজেও সবার সাথে স্বাধীন বাংলা শুনতেন । তবে সেই দলে খোঁড়া জব্বারকে দেখা যেত না । তিনি তখন পাকিস্থানের সেবকদের একত্রিত করার কাজ করছিলেন । এই ধরনের অভুঝ দেশপ্রেমিকদের প্রতি তিনি বেজায় বিরক্ত ছিলেন । তার ধারণা ছিল এই রকম গাধাদের জন্য পাকিস্থান সেনাবাহিনীর ডলা খুব দরকার ছিল । এইবার হারামজাদারা বুঝবে পাকিস্থান সেনাবাহিনী কি জিনিস । হাতে অস্ত্র নাই , পেটে ভাত নাই আবার যুদ্ধের শখ । গাধার গাধা সব কয়টা । এক সময় গ্রামের পরিস্থিতি আরো বেশী খারাপ হতে লাগলো । পাকিস্থানের খাদেমদের সংখ্যা বাড়তে লাগলো । আর তার প্রধান বানানো হলো জব্বারকে। এরকম এক দিনে মতিন হোটেলে বসে ছিলেন । যদিও তার বাড়ি থেকে বের হওয়া প্রায় বন্ধ । শুধু তিনি না গ্রামে যে কয়টা উঠতি বয়সী ছেলে ছিল তারা নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হতো না । আর মেয়েদের তো কথাই নেই । অপ্রয়োজনে শব্দ করাও মানা ছিল । মতিন সাহেবের বাবার কড়া নির্দেশ ‘ বাড়ির কোন সদস্য তার কথা অমান্য করে বাইরে গেলে আর বাড়িতে ঢোকা যাবে না । কেউ সে আদেশ অমান্য করার সাহস পেত না । আজ বাবাই তাকে পাঠিয়েছে । বাজার করতে কারণ ওনার শরীর খুব খারাপ । বের হওয়ার মত অবস্থা নেই । তাই মতিন সাহেব এই হোটেলে এসে বসেছে। গনি মিয়ার হোটেল । দোকানের সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা ‘ পাকিস্থান জিন্দাবাদ ‘। গনি মিয়া মতিন সাহেবকে ঢুকতে দেখে আড় চোখে তাকালেন । পরে আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে মতিন সাহেবের কাছে দাঁড়ালেন।
‘মতিন খবর কি’ ? ‘কিসের খবর’ ? ‘এই সময় আবার কিসের খবর । খবর তো একটাই । আমাগো বাঘের বাচ্চারা দিনে কয়টা পাঞ্জাবীকে ধরে জবাই দিছে’ । ‘আমি কিভাবে জানবো’ ? ‘জানবা না কেন ? জানা উচিত । তোমার মত ছেলেরা এখন কেউ কি আর ঘরে বসে আছে । সবাই যে যেভাবে পারছে দেশকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে । তবে তোমাদের কথা আলাদা । তোমরা হলো মা বাবার আদর্শ ছেলে । বাবা ঘুমাতে বললে ঘুমাও আর জেগে থাকতে বললে জেগে থাকো । গতরে কোন জ্বালা নাই’ । মতিন মোটেই এ রকম ছেলে না । আবার গনি মিয়ার কথার কোন প্রতিবাদ করতে পারলো না । কারণ দেশের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। এরই মধ্য তার কয়েক বন্ধু মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছে । শুধু মতিন বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু করতে পারছে না । এসব কথা যখন ভাবছিল তখনি হোটেলে এসে ঢুকল জব্বার মিয়া । ঢুকেই মতিনকে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন ।
‘আরে মতিন যে । আজকাল যে বাইরে বের হওয়া ছেড়েই দিয়েছ’ ? মতিন কোন কথা বলল না । এই লোকটাকে দেখলেই ওর গা ঘিনঘিন করে । যেন ঠিক রং চঙে গিরগিটির মতো । যদিও শরীরে সুগন্ধি আতর মাখা । চুলে লাল মেহেদী । তবু ওর নামটাও সহ্য করতে পারে না । ‘কি ব্যাপার চুপ কেন মতিন বাবাজী’ ? ‘কোনো কারণ নাই’ । ‘এই সময় একটু চুপচাপ থাকাই স্বাভাবিক । মাথা গরম ভালা না । যারা মাথা গরম করবে পাকিস্থান সেনাবাহিনী তাদের ঠাণ্ডা করার এন্তেজাম করবে । তোমাকে একটা খবর কই’ । জব্বার মিয়ার খবরের প্রতি মতিন সাহেবের কোন আগ্রহ দেখা গেলো না । তবে জব্বার মিয়ার উৎসাহের অভাব ছিল না । তিনি বলতে লাগলেন । ‘গ্রামে সেনাবাহিনী আইতাছে’ । এই খবরে মতিনকে বেশ চিন্তিত মনে হলো । মনে মনে বলল শালা কুত্তার বাচ্চা তোর কারণে যদি এই গ্রামের ক্ষতি হয় তাহলে তোকেই আগে মারব । অবশ্য প্রকাশ করতে পারলো না কারণ এখন জব্বার মিয়ার বিশাল পাওয়ার । গ্রামের সবাই তাকে যমের মতো ভয় পায় । যম জিনিসটা ভালো মতো না বুঝলেও জানে যে ওনার কাজ জান কবচ করা। পরের দিন সকালে স্কুলের হামিদ মাস্টার ছুটতে ছুটতে তাদের বাড়িতে এসে হাজির। মতিনের বাবাকে জানালো স্কুলে মিলিটারি এসেছে । বিশাল বিশাল দেহ । হাতে নানা রকম অস্ত্র । আস্তানা হিসেবে স্কুলই তাদের প্রথম পছন্দ । আরো জানালো যে কাল রাতেই পণ্ডিত অজিত বাবুকে ধরে নিয়ে গেছে । হামিদ মাস্টার শুধু তার বাড়ীতেই খবরটা দিলো না বরং যতদূর পারলো সব বাড়ীতেই গেলো এবং যেটুকু জানে আবার যেটুকু না জানে সেটুকুও বলল । গ্রামের লোক অনেকে আগেই পালিয়েছিল । সেদিন থেকে আরো পালানো আরম্ভ করলো । মতিন সাহেবের বাবাকে খুব চিন্তিত মনে হলো। সকালে তিনি কিছু খেলেন না আবার কারো সাথে কথা বললেন না । মতিন সাহেব একবার শুধু বলেছিলেন ‘আব্বা মিলিটারির উপর রাগ করে খাওয়া বন্ধ করবেন না। খেয়ে নেন’। ওনার আব্বা এমন ভাবে তাকালেন যেন নিতান্ত গাধা ছাড়া একথা কেউ বলবে না । তারপর আস্তে আস্তে বললেন’ তুমি কি বুঝতে পারছো অবস্থাটা কি’ ? ‘জি আব্বা পারছি’ । ‘বুঝেও খেতে বলছো’ ‘খাবো না কেন ? মিলিটারিরা তো এখনি গুলি করে মেরে ফেলছে না’ । ‘ছেলের এরকম কথা শুনে উনি যারপরনাই বিস্মিত হলেন’ । ‘আমি তোমাকে নিয়ে বা আমার জীবন নিয়ে চিন্তা করছি না । করছি তোমার ছোট বোনকে নিয়ে। ওরা তিনটা জিনিস খোঁজে । এক- হিন্দু দুই- মুক্তিযোদ্ধা আর তিন – মেয়ে মানুষ । আমার ঘরে প্রথম দুটা পাবেনা । কিন্তু শেষেরটা নিয়ে চিন্তা । সব কয়টা বদমাইশ । ছোট বড় কাউকে ছাড়ে না । আরে হারামজাদা তোদের ঘরেও তো মা বোন আছে । তারপর সাথে আছে হারামজাদা জব্বার । কোথায় কি আছে না আছে সব চিনিয়ে দেবে । ঐ শয়তানরে একটা শিক্ষা দিতে পারলে কাজের কাজ হতো ‘। সারা দিন ঘরের মধ্য কেটে গেলো । তারপর রাত গভীর হলে মতিন বেরিয়ে গেলো । পাশের গ্রামের মুক্তিযোদ্ধার একটা দল ছিল । তাদের একজন সদস্য বাড়ল । মতিন । বিশ বছরের টকবগে যুবক। ছেলে ঘরে নেই শুনে মতিনের বাবা তেমন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না । শুধু মনে মনে বললেন ‘ যুদ্ধে গেছে ভালো হইছে । সব কয়টারে কচু কাটা করা দরকার । এমনেও মরছি অমনিতেও মরছি । দুই একটারে সাথে নিয়ে মরা ভালো । সবার আগে মারা দরকার জব্বাররে’ । যাই হোক জব্বারকে কেউ মারতে পারলো না । মুক্তিযোদ্ধারা দুইবার মারার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু সফল হয় নাই । শালার কই মাছের জান। যুদ্ধ শেষে গ্রামে ফিরে আসে মতিন । ওরা কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নেয় জব্বার মিয়াকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হবে । একটা গাছের সাথে হাত পা রশি দিয়ে বাঁধা হয় । জব্বার তেমন কোন চিৎকার চ্যাঁচামেচি করছে না । হতাশ দৃষ্টিতে চারদিকে দেখছে । ভাবখানা এমন যে এই মুহূর্তে পাকিস্থান সেনাবাহিনী তাকে বাঁচানোর জন্য ছুটে আসবে । অবশ্য তেমন কিছু হলো না । গ্রামের কিছু উৎসাহী মানুষ চারদিকে ভিড় করে দাড়িয়ে থাকলো । তাকে মারার জন্য কাঠ , কেরোসিন সব জোগাড় করা হলো। তবে কোন এক কারণে তার শাস্তি পরিবর্তন করা হলো। মাথা ন্যাড়া করে মুখে কালি দিয়ে সারা গ্রাম ঘোরানো হলো । একটা পা ভেঙ্গে দেয়া হলো । তারপর গ্রাম থেকে বের করে দেয়া হলো। দীর্ঘ পাঁচ বছর তার আর কোন দেখা পাওয়া গেলো না । গ্রামবাসী যখন তাকে গালি হিসেবে ব্যাবহার করতো ঠিক সেই সময় আচমকা একদিন জব্বার মিয়া গ্রামে এসে উপস্থিত । প্রথমে গেলো চেয়ারম্যানের কাছে । হাত – পা ধরে ক্ষমা চাইলো । তারপর গ্রামের মাতব্বরদের সামনে আরেক দফা কান ধরে ওঠ বস করে মাফ পেলো । মতিনের তেমন কিছু করার ছিল না । কারণ দেশের পরিস্থিতি তখন পাল্টাতে শুরু করেছে । তাই এই বিষয়টা নিয়ে কেউ মুখ খুললো না । কিন্তু এরপর যা ঘটলো তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। জব্বার মিয়া মনে হয় সাথে করে জাদুর প্রদীপ তডিপ নিয়ে এসেছিলো । গ্রামের গরীব মানুষের জমি বিঘার পর বিঘা কিনতে লাগলো । টাকা পয়সা বাড়তে লাগলো । আর টাকা পয়সা থাকলে যা হয় । বড় বড় লোকজনের সাথে ওঠা বসা করতে লাগলো । গ্রামের মাতব্বররা তার সাথে চলাফেরা করতে লাগলো। এমন ভাব করতে লাগলো যেন জব্বার কোন কালেই রাজাকার ফাজাকার কিছু ছিল না । অতি ভালো মানুষ । এর সাথে দান করতে লাগলো । মানুষজনকে বিপদে টাকা পয়সা ধার দিতে লাগলো । ফলে কেউ তাকে কিছু বলতো না । এভাবে গ্রামে তার স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠা হলো। একদিন গ্রামের রাস্তায় তার সাথে জব্বার মিয়ার দেখা হয়ে গেলো । মতিন চাইলো এড়িয়ে যেতে কিন্ত পারলো না । ‘এই যে মতিন বাবাজী খবর কি ? আছো কেমুন’ ? মতিন কোন কথা বলল না । চুপ করে থাকলো । কিন্তু জব্বার নিজ থেকেই চালিয়ে গেলো । ‘অতীতের কথা এখনো ভুলতে পারোনাই মতিন মিয়া ? ভুইলা যাও । কি দরকার ওসব মনে রাখার ? আমি কি ছিলাম তা চিন্তা কইরা আর কি ফায়দা কও । একটা ভুল করছি । শাস্তিও দিছো । দেও নাই’ ? মতিন এতক্ষণ একটাও কথা বলে নাই । এবার বলল । ‘হারামজাদা কুত্তা । তোর মুখে থু থু ছিটালেও শাস্তি হবে না’ । জব্বার মিয়া মনে হয় এ কথার জন্য প্রস্তুত ছিল না । শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো ।
তাপসকিরণ রায়
আপনার গল্পটি খুব ভালো লাগলো.বেশ গুছিয়ে লেখা মনে হলো.সরল ভাব ভাষায় গল্পটিকে আরো প্রাঞ্জল করে তুলেছে.তবে এটা দেখে দুঃখ হচ্ছে--আপনি মাত্র ১০ টি মন্তব্য পেয়েছেন.আপনি কি পাঠকলেখকদের সঙ্গে পরিচিত নন ?
তানজিয়া তিথি
মতিন সাহেব সারা জীবন তাই করেছেন। আজো তাই করবেন। ঐ মালা তিনি পরতে পারবেন না । কোনোদিন না । কাগজটা আবার ভাঁজ করে পকেটে রাখেন । ---- খুব সুন্দর কাহিনী ঘিরে গল্পের আবর্তন । ভোট করলাম ভাইয়া ।
মিলন বনিক
চমৎকার গল্প...গল্পের প্লটে নতুনত্ব আছে...আছে সামন্জস্যতা আর বর্তমান প্রেক্ষাপটের সত্য দৃষ্টান্ত...খুব ভালো লাগল...কিন্তু পাঠক কম দেখে হতাশ হচ্ছি....
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।